শিক্ষনীয় গল্প
একটি সাধারণ গ্রামের ঘটনা ।গ্রামের এক মুরুব্বীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মুর্দার দাফন কাফন নিয়ে। মুরুব্বির নাম সাঈদ মাহমুদ। একদিন সকালে হঠাৎ সে মৃত্যু বরণ করে তার মৃত্যুতে গ্রামের সকলেই শোকাহত ছিল। গ্রামের যুবকেরা সাঈদ মাহমুদের দাফন কাফনের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল যে যা কাজ পারে সে সেভাবে মুর্দার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুলির প্রস্তুত করছিল। তাদের মধ্যেকার এক যুবক রাফি আহমেদ বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা দেখে সেখান থেকে দ্রুত সরে গেল। সে ভাবলো সে কি ঠিক করছে সে দীর্ঘ সময় অনুশোচনায় ভুগছিল হঠাৎ একদিন তার পরিবারের উদ্ভট আচরণে সেই মৃত ব্যক্তির অতীতকে স্মরণ করলো এবং সে দেখল ওই মৃত ব্যক্তির সাঈদ মাহমুদ অনেক সময় অনেকের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন যে কারণে অনেকের মনে অনেক সময় আঘাত পেত।
সে যুবক রাফি আহমেদ পরিবারের খারাপ আচরণের দিকে লক্ষ্য করে দেখতে পেল যে রাফি আহমেদের কার্যক্রম এবং সহযোগিতা হয়তোবা সাঈদ মাহমুদের নসিবে বা ভাগ্যে ছিল না সে স্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ সময় পড়ে স্বস্তি পেল। কারন সে বুঝতে পারলো সৃষ্টিকর্তা যেখানে সহযোগিতার জন্য যুবককে নিযুক্ত করছে না সেহেতু ঐ মৃত্যু ব্যক্তি সাঈদ মাহমুদ কোন না কোন সময় তার সীমা অতিক্রম করেছে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সীমা অতিক্রম কারীর শাস্তি ভয়াবহ এবং যন্ত্রণাদায়ক।
অনেক কিছুদিন পেরিয়ে যায় যুবক তার ১৪ জন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে যান বন জঙ্গলে সারভাইভের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে তারা প্রকোপ শীতের মুখোমুখি হয় এবং তা সামলে নিতে না নিতেই তাদের সামনে কাটার উপরে খারার ঘা হিসেবে অঝোরে বৃষ্টি চলে আসে তারা তাদের ক্যাম্পের ভিতরে জড়োসড়ো হয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেয় বাইরের আবহাওয়া পরিষ্কার হলে তারা তাদের যাত্রা একই স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রা করেন । তাদের যাত্রা শেষ হলে তারা নতুন স্থানে নতুন ভাবে ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করে।
নতুন ক্যাম্পের কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে পুরনো ক্যাম্প থেকে প্রায় 6 জন চলে গেছে বাকি অবশিষ্ট 8 জন মিলে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের নতুন ক্যাম্প তৈরির কার্যক্রম প্রায় শেষ করে ফেলেছে এমন সময় কালো অন্ধকার মেঘে ছেয়ে গেছে পুরো আকাশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সব যুবকেরা। এমন সময় কাঁদতে কাঁদতে আসতে দেখা যায় একটি মহিলা এবং দুইটি পুরুষকে তারা ছিল বাবা-মা এবং সন্তান তাদের মেয়ে হারিয়ে গেছে তারা মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে পথ হারিয়ে জঙ্গলের মাঝে ঢুকে পড়েছে এবং দিশেহারা হয়ে মেয়ে হারানোর শোকে কান্নাকাটিতে ভেঙে পড়েছে।
সব যুবক যখন ক্লান্ত সেই এক যুবক রাফি আহমেদ তখনো অনেকটাই চাঙ্গা ছিল সে ওই পরিবারের কাছ থেকে সকল তথ্য নিয়ে তাদেরকে নতুন ক্যাম্পে স্বাগত জানিয়ে বিশ্রাম করতে অনুরোধ করেন প্রথমে তারা বিশ্রামে রাজি হয় না তারা তাদের মেয়েকে খুঁজতে বদ্ধপরিকর কিন্তু তারাও খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। যুবক রাফি আহমেদ তাদের ক্লান্তি বুঝতে পারে এবং তাদের আবারও ক্যাম্পে অবস্থানের অনুরোধ জানায় প্রথমে মা এবং বাবা ক্যাম্পে থাকতে রাজি হলেও মেয়ের ভাই উচ্চস্বরে বলে উঠল আমিও যাব আমার বোনকে খুঁজতে যা কথা তাই কাজ যুবক রাফি আহমেদ এবং মেয়ের ভাই সুজন ওই মেয়ের নাম ছিল সাদিয়া। রাফি আহমেদ এবং সুজন সাদিয়াকে খুঁজতে বেরিয়ে গেল।
যেহেতু রাফি আহমেদ প্রায় এক সপ্তাহ যাবত ওই বনে সারভাইভ করছিল সেহেতু রাফি আহমেদ ওই বোনের অনেক কিছুই জানে এবং বোঝে রাফি আহমেদ আধুনিক ছেলে হওয়ায় সে জঙ্গলের পুরো ম্যাপ টা ভালো হবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদের রিসোর্ট থেকে কোন দিকে তাদের মেয়ে গিয়েছিল এবং তারা কোন দিক দিয়ে এসেছে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে সে একটি নির্ধারিত দিক ঠিক করে এবং সে পথেই চলতে থাকে সে পথে চলতে হলে প্রায় তিনটি পাহাড় অতিক্রম করতে হতো প্রথম পাহাড়টি অতিক্রম করতে সাদিয়ার ভাই সুজন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং ছোট করে বলছে ভাই আমার দ্বারা আর যাওয়া সম্ভব না দয়া করে তুমি আমার বোনকে খুঁজে এনে দাও।
যুবক রাফি আহমেদ রাজি হল এবং সুজন কে বলল যে তুমি ক্যাম্পে ফিরে যাও আমার দ্বারা যতটুকু সম্ভব হবে আমি করব। সুজন ক্যাম্পে ফিরে গেল এবং রাফি আহমেদ গন্তব্যের দিকে ছুটে গেল হাঁটতে হাঁটতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ছোট ছোট বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে চারিদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে এমন সময় পথ চলতে চলতে সে দেখতে পাই একটি মেয়ে গাছের গোড়ায় বসে আছে ছেলে যেহেতু আধুনিক সেহেতু মেয়েটির ফটো এবং নাম পোশাক আশাক পোশাক এবং পোশাকের রং ও ধরন সব সম্পর্কেই সে জেনে নিয়েছিল এবং তার সঙ্গে মিলে যায়।
মেয়েটি অতি পর্দাশীল হয় ছেলেটির সঙ্গে প্রথমে কথা বলতে রাজি হচ্ছিল না কিন্তু চারিদিকে অন্ধকার কিছু করার নেই আকাশে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে পরবর্তীতে রাফি আহমেদ যখন তার পরিবারের কথা বলল এবং তার পরিবারের সম্পর্কে জানালো যে তারাই রাফি আহমেদকে সাদিয়াকে খুঁজতে পাঠিয়েছে। তখন সাদিয়া রাফি আহমেদের সঙ্গে যেতে রাজি হল তারা একটা বন পেরোতে অন্ধকার নেমে এলো এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে রাফি আহমেদের কাছে থাকা সামান্য সরঞ্জাম দিয়ে সাদিয়া সহযোগিতায় একটা ক্যাম্প তৈরি করল।
ভিজে থাকা কাপড়ে তাদের ঠান্ডা তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিল তাদের কাপুনি তুলে দিল রাফি আহমেদ অনেক কষ্টে আগুন জ্বালানোর চেষ্টাই সফল হল তারা দুজনে আগুন পেয়ে ভীষণ খুশি। তারা আগুনে তাদের ঠান্ডা নিবারণে সফল হলো রাফি আহমেদের কাছে থাকা সামান্য খাবার দুজনে খেলো। রাফি আহমেদ নিজ মনে বসে রয়েছে। সাদিয়া মেঘের গর্জনে ভীত হয়ে এক কোণে বসে রয়েছে। রাফি আহমেদ তার সাহস বাড়ানোর জন্য এবং তাকে স্বাভাবিক রাখার জন্য তার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলছে।
তারা অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টায় ব্যস্ত কিন্তু সাদিয়ার রাত্রে এমন পরিবেশে থাকার অভ্যাস ছিল না তাই সে বিব্রতকর পরিবেশে পড়ে গিয়েছিল তার কোনভাবেই ঘুম আসছিল না। রাফি আহমেদ তাকে ঘুমাতে সহযোগিতা করলো একটি কম্বল ছিল যেহেতু সেহেতু তারা দুজনে এক কম বলেই ছিল তারা দীর্ঘ সময় কথোপকথনের মাঝে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাদের মাঝে সু সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রাফি আহমেদ বুঝতে পারলো দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে তাকে খুঁজে পাওয়া দীর্ঘ আসার পরে বনে ঘুরতে করতে আসা। সবকিছু যেন তার ভাগ্যের লেখা ছিল সে বুঝতে পারলো তার ভাগ্যে সে মেয়েটি রয়েছে মেয়েটিও অনেক পর্দাশীল এবং দ্বীনদার যে কারণে রফি আহমেদের জীবনসঙ্গিনী নির্বাচন করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। তারা সকালে বাইরের আবহাওয়া পরিষ্কার হলে ক্যাম্পের দিকে রওনা দেয় অনেক কষ্টে রাফি আহমেদের হাত ধরে পাহাড় পেরিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।
যুবক রাফি আহমেদ অনেক শক্ত মনের মানুষ হওয়ায় সাদিয়ার পরিবারের কাছে তাদের বিয়ের প্রস্তাব রাখে পরিবারের সকলের রাজি হলেও সাদিয়ার মা কোনভাবেই রাজি হচ্ছিল না কারণ সাদিয়ার মা ছিল একজন প্রভাবশালী বংশের মেয়ে এবং তিনি কর্মরত ছিলেন একজন জজ হিসেবে যে কারণে সে সাধারণ কোনো ছেলেকে তার মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। যে কারণে প্রথম অবস্থায় তাদের বিয়েটা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যে থাকলে যা হয় মেয়েটার সঙ্গে যোগাযোগ রাফি আহমেদের থেকে যায়।
সাদিয়া ও রাফিকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিল যার ফলে সাদিয়া রাফিকে তার বাড়িতে একদিন দাওয়াত করে সাদিয়ার পরিবার জানতো না যে রাফি আহমেদকে না জেনেই সাদিয়ার মা এই বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায়। সাদিয়ার বাড়িতে রাফি গেলে রাফির মা তাকে এক ধরনের অপমান অপদস্ত করার চেষ্টাই ব্যস্ত হয়ে ওঠে কিন্তু রাফি কোনভাবেই হেরে যাওয়ার বান্দা নয় তাই সাদিয়ার মা বারবার ব্যর্থ হয় সে একসময় কৌতুহলবশত রাফির সম্পর্কে জানতে চাই। এবং সাদিয়া রাফি আহমেদের বিষয়ে সব কিছু খুলে বলে এবং সাদিয়ার মা তার ভুল বুঝতে পারে রফি আহমেদের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়।
পরিবেশ সম্মতভাবে আনুষ্ঠানিকতার সাথে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর ছেলেটির ভিতর বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো সাদিয়ার মা কে এড়িয়ে চলা এবং তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্মান না দেওয়া। সাদিয়ার মারাবি সম্পর্কে সম্পূর্ণ না জেনে বাজে মন্তব্য করায় রাফি ভালোবাসার চেয়ে প্রতিশোধের নেশায় মেতে ওঠে পরবর্তী সময়ে এসে মানসিকভাবে বিয়ের প্রস্তুত না থাকলেও প্রতিশোধের নেশায় সে দ্রুত বিয়ে করতে সম্মত হয় এবং বিয়ে সম্পন্ন করে।
সাদিয়ার মা রাফির সঙ্গে ভালো আচরণ করলেও রাফি এমন একটা গুরুত্ব দেয় না কারন সে একমাত্র জানে যে সে ভালোবাসার জন্য নয় প্রতিশোধের জন্য এই বিয়েটা করেছে। রাফির বিষয়ে না জেনে সাদিয়ার মা বাজে মন্তব্য করার কারণে রাফি এবং সাদিয়ার সংসারে সুখের পরিবর্তে দুঃখ দুর্দশায় ভরা পরিবেশ তৈরি হয়। সাদিয়া কোনভাবেই বুঝতে পারছে না তার সঙ্গে এটা কি হচ্ছে কেনই বা হচ্ছে। কিন্তু সাদিয়ার মা বিচক্ষণ হওয়ায় বুঝতে পারে তার মেয়ে মোটেও সুখে নেই এবং তার মেয়ের সুখে না থাকার পেছনে কারণ তার অহংকার।
সাদিয়ার মা একদিন রাফিদের বাড়িতে বেড়াতে আসে এমন সময় রাফিদাকে এড়িয়ে যেতে চাইলে সাদিয়ার মা কথা বলতে চাই । রাফি কথা বলতে সম্মত হলেও খুব একটা বেশি গুরুত্বের সাথে কথা বলছিল না । সাদিয়ার মা বুঝতে পারে যে তার খারাপ আচরণের কারণে রাফি এখনো ভীষণ রাগ করে আছে যে কারণে তার সঙ্গে কথা বলছে না সাদিয়ার মা বিভিন্ন ভাবে রাফিকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তার ভুল হয়েছে কিন্তু রাফি কোন ভাবেই মানতে নারাজ এত বিচক্ষণ ব্যক্তির এত বড় ভুল কিভাবে হতে পারে
সাদিয়ার মা যেহেতু রাফির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়েছে সেহেতু পরিবেশটা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে এবং সাদিয়া ও রাফির সংসার আবার নতুন ভাবে ভালোবাসার বন্ধনে শুরু হচ্ছে তাই সবাই খুশি। এমন সময় সাদিয়ার মা রাফিকে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত করে এবং রাফি তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য সম্মত হয় । যাতায়াত স্বাভাবিক হয় এবং একটি আলাদা সুসম্পর্ক তৈরি হয় যাতে কোন অসম্মান ছিল না , সম্মানের ঘাটতি ছিল না , ভালোবাসার ঘাটতি ছিল না , অহংকারের ছাপ ছিল না তাই সবাই স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন শুরু করে।
এখান থেকে বোঝা যায় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই ভেবে চিন্তে নিতে হবে অবশ্যই যে বিষয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন সে বিষয়ে সম্পূর্ণ জানতে হবে তবে আপনি আপনার সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন। ভুল সে ব্যক্তি বোঝে যার সঠিক বোঝার জ্ঞান থাকে না ওই পরিবেশ পরিস্থিতি ও ওই বস্তুর উপরে।
এম এ এস ওয়ার্ড স্টোরি এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url