একদিন বয়স শিশুদের শীতের সময় কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত

শীতের সময় একদিন বয়সী শিশুর যত্ন বিশেষভাবে নেওয়া জরুরি, কারণ নবজাতকরা তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা অনুভব করে। শীতকালে তাদের উষ্ণ ও আরামদায়ক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে শীতের সময় নবজাতকের জন্য করণীয় কিছু পদক্ষেপ।



 একদিন বয়স শিশুদের শীতের সময় কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত

১. শিশুকে উষ্ণ রাখাঃ

শিশুর শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখুন। নরম, আরামদায়ক এবং ত্বক-বান্ধব সুতির পোশাক পরান। মাথা, হাত ও পা ঢেকে রাখার জন্য টুপি, মিটেন ও মোজা ব্যবহার করুন।

একটি হালকা এবং উষ্ণ কাঁথা বা সোয়াডলিং ক্লথ দিয়ে শিশুকে মোড়ান। তবে খুব টাইট না করে আরামদায়কভাবে মোড়ানো উচিত।

ঘর যেন খুব ঠান্ডা না থাকে তা নিশ্চিত করুন। রুম হিটার ব্যবহার করলে সতর্ক থাকুন যাতে শিশুর ত্বক শুষ্ক না হয়।

শিশুকে হালকা, সুতির এবং আরামদায়ক পোশাক পরান।

প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক স্তরের পোশাক ব্যবহার করুন। একাধিক স্তর উষ্ণতা ধরে রাখে এবং বাড়তি গরম লাগলে সহজে খুলে ফেলা যায়।

মাথা, হাত, এবং পায়ের জন্য টুপি, মোজা, এবং গ্লাভস ব্যবহার করুন।

শিশুকে মসৃণ এবং হালকা ওজনের কম্বল দিয়ে মোড়ান।

খুব ভারী বা মোটা কম্বল ব্যবহার করবেন না, যা শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

ঘরের তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখুন।

প্রয়োজনে হিটার বা গরম বাতি ব্যবহার করুন। তবে শিশুর থেকে সরাসরি হিটারের তাপ দূরে রাখুন।

রুমের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন, তবে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল নিশ্চিত করুন।

শিশুকে সরাসরি ঠান্ডা মেঝেতে বা শীতে ধাতব জায়গায় রাখবেন না।

একটি পরিষ্কার এবং নরম বিছানায় বা ম্যাট্রেসে শিশুকে শোয়ান।

শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান। এটি শিশুর শরীরে তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

মায়ের দুধে থাকা পুষ্টি শিশুর শরীরকে গরম রাখার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দেয়।

দিনের উষ্ণ সময়ে শিশুকে সূর্যের আলোয় কিছু সময় রাখুন (১৫-২০ মিনিট)।

এটি শিশুর শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করে।

শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যাতে শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় ত্বক আর্দ্র থাকে।

চামড়া ফাটা বা লালচে হয়ে যাওয়া এড়াতে ত্বক সুরক্ষিত রাখুন।

শিশুকে শীতল বাতাস বা ঠান্ডা স্থানে নিয়ে যাবেন না।

রাস্তায় বের হলে শিশুকে গরম কাপড় দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে রাখুন।

২. ত্বকের যত্নঃ

শীতকালে নবজাতকের ত্বক শুষ্ক হতে পারে। ত্বক আর্দ্র রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শে একটি ভালো মানের বেবি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

শিশুর ত্বক পরিষ্কার রাখতে গরম পানিতে নরম কাপড় দিয়ে মুছুন। সরাসরি গোসল করানোর প্রয়োজন নেই।

৩. সঠিক স্তন্যপানঃ

শীতে শিশুকে বেশি বেশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ান। এটি শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

শিশুর মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে গেলে সামান্য মায়ের দুধ দিয়ে মাখিয়ে দিতে পারেন।

নবজাতককে প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর স্তন্যপান করান।

শীতের সময় শিশুর শরীর উষ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও হাইড্রেশন নিশ্চিত করতে ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ।

যদি শিশু ঘুমিয়ে থাকে এবং দীর্ঘ সময় দুধ না খায়, তাহলে আলতো করে তাকে জাগিয়ে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় উষ্ণ ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করুন।

নিজেও গরম কাপড় পরুন এবং শিশুকে গরম কম্বলে জড়িয়ে রাখুন।

ফ্ল্যাট বা হালকা কাত হয়ে বসুন যাতে মা ও শিশু দুজনেই আরামদায়ক থাকে।

স্তন্যপানের সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন, যাতে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ না করে।

ঘরের তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার চেষ্টা করুন।

শীতের সময় মায়ের শরীর হাইড্রেটেড রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং উষ্ণ তরল খাবার (যেমন স্যুপ, দুধ) পান করুন।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে দুধের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি করুন।

ঠান্ডার সময় মায়ের স্তনের ত্বক শুষ্ক হতে পারে। স্তনের ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে নারকেল তেল বা স্তনের জন্য উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

স্তনে ফাটল বা ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

দুধ খাওয়ার সময় বা পরে শিশুর অস্বস্তি, কান্না, বা চোষার ক্ষমতা কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শীতজনিত কারণে শিশুর ত্বক বা শরীর অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে দুধ খাওয়ানো বন্ধ না করে শিশুকে উষ্ণ রাখার ব্যবস্থা করুন।

স্তন্যপান শিশুর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তাই শীতের সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।

রাতে স্তন্যপান করানোর সময় উষ্ণতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিন, যেমন গরম জায়গায় থাকা।

কোনো ধরনের সংক্রমণের লক্ষণ (যেমন ঠান্ডা, সর্দি) থাকলে শিশুকে স্তন্যপান চালিয়ে যান এবং নিজের স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতন থাকুন।

৪. বিছানার ব্যবস্থাঃ

শিশুর ঘুমানোর বিছানা নরম ও উষ্ণ রাখুন। বিছানায় অতিরিক্ত কম্বল বা ভারী কাপড় ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলো শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুকে সবসময় সমতল ও নিরাপদ বিছানায় শোয়ান।

 শিশুর জন্য মাঝারি নরম এবং সমান গদি ব্যবহার করুন। খুব বেশি নরম গদি শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বিছানা ব্যবহার করার আগে কিছু সময় হালকা গরম পানির বোতল বা হিটার দিয়ে বিছানা গরম করুন। তবে শিশুকে রাখার আগে অবশ্যই গরম বোতল বা হিটার সরিয়ে ফেলুন।

বিছানার আশপাশে গরম বাতি বা রুম হিটার রাখুন, তবে সরাসরি শিশুর শরীরে তাপ লাগার ঝুঁকি এড়ান।

বিছানায় কোনো ভারী বালিশ, খেলনা বা বড় কম্বল রাখবেন না, যা শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বিছানার চারপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নরম বাম্পার বা সাইড গার্ড ব্যবহার করুন।

শিশুর বিছানা সম্পূর্ণ শুকনো এবং পরিষ্কার রাখুন। ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে বিছানা শিশুর শরীর ঠান্ডা করে দিতে পারে।

যদি শিশুর প্রস্রাব বা বমি হয়, তাৎক্ষণিকভাবে বিছানার চাদর পরিবর্তন করুন।

শিশুকে বিশেষ উষ্ণতার জন্য সুয়েডেন পদ্ধতিতে (Swaddling) মোড়ানো যেতে পারে। এটি শিশুদের আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিত করে।

অতিরিক্ত তাপের কারণে শিশুকে ঘামাচি বা অতিরিক্ত গরম লাগলে কম্বল বা পোশাকের স্তর হ্রাস করুন।

বিছানায় মশারির ব্যবস্থা রাখুন যাতে শিশুকে মশা বা অন্যান্য পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

৫. ঘরের পরিবেশঃ

ঘরের জানালা বন্ধ রাখুন যাতে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ না করে। তবে ঘর মাঝে মাঝে বাতাস চলাচলের জন্য খোলাও রাখতে হবে।

ধোঁয়া, ধুলা বা অতিরিক্ত শুকনো পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। যদি ঘর খুব শুষ্ক হয়, তাহলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।

৬. নাভি ও অন্যান্য যত্নঃ

শিশুর নাভি শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন। এটি ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে নিন।

ডায়াপার পরিবর্তনের সময় শিশুর ত্বক পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। ডায়াপার র‍্যাশ এড়াতে ভালো মানের ক্রিম ব্যবহার করুন।

নাভি শুকানোর জন্য এটি শুষ্ক এবং পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবার ডায়াপার পরিবর্তনের সময় নাভির চারপাশ পরীক্ষা করুন এবং ভেজা থাকলে পরিষ্কার, নরম কাপড় বা তুলো দিয়ে আলতো করে মুছে শুকিয়ে নিন।

নাভি পুরোপুরি শুকানোর আগে শিশুকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে গোসল করানো থেকে বিরত থাকুন।

গোসল করানোর সময় নাভি ভিজলে, তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিন।

নাভির চারপাশে কোনো রকম লালচে ভাব, দুর্গন্ধ, বা পুঁজ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

নাভিতে পাউডার, তেল, বা কোনো রাসায়নিক প্রয়োগ করবেন না, যদি না চিকিৎসক পরামর্শ দেন।

শিশুর চুলে সপ্তাহে ২-৩ বার হালকা গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।

অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার না করে বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

শিশুর চারপাশ সবসময় পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখুন।

শিশু স্পর্শ করার আগে হাত ধুয়ে নিন।

যদি শিশুর জ্বর, অতিরিক্ত কান্না, বা শরীরে লাল দাগ দেখা যায়, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

৭. ডাক্তারের পরামর্শঃ

শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলে (যেমন হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা, ত্বক নীলচে দেখায়) বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তৎক্ষণাত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

নিয়মিত চেকআপ করুন এবং টিকাদান সময়মতো সম্পন্ন করুন।

৮. পরিবারের উপস্থিতি ও ভালোবাসাঃ

শিশুকে মায়ের বুকের কাছে রাখুন। এতে উষ্ণতা বজায় থাকে এবং শিশুর মানসিক স্বস্তি আসে।

শিশুকে বারবার কোলে নিয়ে রাখুন, কারণ এতে শিশুর শরীর উষ্ণ থাকে।

শীতে নবজাতককে সুরক্ষিত রাখতে উষ্ণ পরিবেশ ও মায়ের সঠিক যত্নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম এ এস ওয়ার্ড স্টোরি এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪